Posts

গোয়েন্দা গল্প: বুড়ো

Image
প্রখ্যাত গোয়েন্দা আহমেদ শরীফ রাতের খাবার খেতে এসেছিলেন তাঁর বন্ধু বদরুদোজ্জা সাহেবের সাথে, রাজেন্দ্রপুর শহরের অভিজাত রেস্তোঁরা, 'ক্যাফে পাতিসেরি'-তে। সুস্বাদু বিদেশী খাবারের জন্যে এই ক্যাফের সুনাম আছে উচ্চবিত্তদের মাঝে। বদরুদোজ্জা সাহেব ক্যাফে পাতিসেরির বেশ ভক্ত। তিনি এখানকার শীতল, ধীর পরিবেশটা বড় পছন্দ করেন। আরো পছন্দ করেন এখানকার পশ্চিমা খাবারগুলো। সেই মুহুর্তে বদরুদোজ্জা সাহেব আহমেদ শরীফকে দেখাচ্ছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক শিমুল দস্তিদার এই ক্যাফেতে খেতে এসে তার সাথে ঠিক কোন টেবিলে বসেছিলেন। বদরুদোজ্জা সাহেব নিজে ঠিক সংস্কৃতিমনা মানুষ নন, তবে যারা শিল্পের চর্চা করেন, তাদের প্রতি তার এক রকমের দূর্বলতা রয়েছে।  ক্যাফের ওয়েইট্রেস মিস ইশিতা এগিয়ে এসে পরিচিত খদ্দের বদরুদোজ্জা সাহেবকে আমন্ত্রণ জানাল বসবার। নিয়মিত খদ্দেরেরা কে কী খায়, এটা মনে রেখে মিস ইশিতা নিজের মনে বেশ প্রচ্ছন্ন গর্ব অনুভব করে।  - "শুভ সন্ধ্যা স্যার !! আপনি ভাগ্যবান। এমন দিনে এলেন- স্টাফ করা টার্কি আছে আজ মেন্যুতে। আপনার সবচেয়ে প্রিয় ওটা, তাই না ?? ... বলুন স্যার। কী দেবো আগে, স্যুপ না কোন মা...

রত্ন চোর

Image
- " রত্নচুরি ?? বলেন কী ?? " - " উহুহু, চুরি নয়-চুরি নয়। চুরির ব্যর্থ চেষ্টা..." - " রহমত পাটোয়ারীর বাড়িতে চুরির চেষ্টা ?? উরেব্বাস- সাহস আছে বলতে হয় ব্যাটার...। কী যেন নাম বললেন স্যার ?" - "নাম বলি নি।... বলার সুযোগ দিলেন কোথায় ?? পুরোটা শোনার আগেই যেরকম চ্যাঁচামেচি জুড়ে দিলেন..." - "হে হে... মাফ করবেন স্যার। মফস্বলের পত্রিকা, কেবল তো সিনেমার গসিপ আর রাজনৈতিক গ্যাঞ্জামের খবর লিখে পৃষ্ঠা ভরাতে হয়। অনেকদিন এরকম 'স্কুপ' খবর পাইনিতো- তাই স্যার মানে যাকে বলে উত্তেজিত হয়ে একেবারে..."  - "হুমম। ... বুঝেছি- এবার থামুন। কী যেন নাম বলেছিলেন আপনার ?? হুঁকো বরদার ??" - " আমার নাম, স্যার ?? সেতো ফজু সর্দার। স্যার দেখছি- হেহে- ভুলে বসে আছেন...। তা স্যার আমরা অতি নগণ্য মানুষ- আপনাদের মতো মহীরুহেরা আমাদের ভুলে যাবেন- এটাই তো স্যার স্বাভাবিক..." - "হয়েছে, হয়েছে। ফ্যাঁচফ্যাঁচিয়ে ম্যালা দেরি করিয়ে দিচ্ছেন...। থানায় তো আমাদের আরো কাজ আছে, আপনার মতো দুদশটা ইশটুপিডকে গপ্পো শোনানো ছাড়াও, নাকি ?? নিন- তাড়াতাড়...

নিখোঁজ

Image
এজেন্ট রিশাদের ডেস্কে একটা নতুন ফাইল দেখা যাচ্ছে। ফোকাস লাইটের আলোয় কেস ফাইলটি অদ্ভুত শাইনি একটা ভাব দেখাচ্ছে। হাতের মুঠি শক্ত করে চিবুকের ঠিক সামনে চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে রয়েছে। পাশে এজেন্ট রণিন বসে আছে। তাকিয়ে আছে রিশাদের দিকে। -কি কেইস এইটা? -একটা বড় চক্রের ব্যাপারে। সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলির মানুষগুলিকে জিম্মি করে পণ আদায় করে। -সেকি! এই কান্ড কবে থেকে শুরু হলো? -তাতো ঠিক জানি না। তবে ফাইল ইঙ্গিত দিচ্ছে যে গত বছরখানেক ধরে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ঢাকার নামিদামী সকল শিল্পপতি পরিবারকে টার্গেট করা হচ্ছে। রণিনকে বাইরে যেয়ে এলিট কলোনিগুলা ম্যাপিং করতে বললো। এরপর চিন্তায় ডুবে গেলো রিশাদ। জাহেদকে নিয়ে চক্কর লাগাতে হবে এসব এলাকায়। জাদুর জুতোয় টাইট দিয়ে উঠে দাঁড়ালো রণিন। ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টার এর হেলিপ্যাড এর মাঝ বরাবর দাঁড়ালো, ফাইবার গ্লাসের সাথে ব্লুটুথ হেডফোনটা ঠিকমতো সাঁটালো। একটা ভয়েস রিকগনাইজড ফোন করলো সাপোর্ট সেন্টারে- -সাপোর্ট এজেন্ট সুদীপ্ত বলছি। বলুন কিভাবে সহযোগীতা করতে পারি। -এজেন্ট রণিন বলছি। ধানমন্ডি, গুলশান, উত্তরা, বনানী, বারিধারা, আশুলিয়া সহ সব এলিট কলোনির ঠিকানা চাই। -এ...

সিরিঞ্জ

Image
বিছানায় পরে থাকা দেহটার দিকে তাকিয়ে আপন মনে হাসল আসিফ। একবারে নিখুত খুন। সূক্ষ্ম সুঁই দিয়ে এক সিরিঞ্জ বাতাস হাতের রগ দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দেয়। সাথে সাথে শেষ। যে কেউ বলবে হার্ট অ্যাটাক। নিজের দক্ষতা দেখে খুশি হল আসিফ। ফোন দিল তুর্যকে। বলে, - কাজ শেষ - নার্ভ চেক করসস? - হ্যাঁ, করছি - হাতে সুঁই এর দাগ দেখা যায়? - না। একবারে পরিষ্কার। - ওকে, ছদ্মবেশটা নিয়ে চলে আয় - ওকে শেষবারের মতো গলার রগটা চেক করল। নাহ শেষই। শিশ বাজাতে বাজাতে গ্লাভস খুলে ছদ্মবেশটা নিয়ে বের হয়ে আসে।. . . আসিফ ও তুর্য। ঢাবির ক্রিমিনালজি ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে ব্রাইট দুইজন স্টুডেন্ট। কিন্ত এর বাইরেও ওদের আরও একটা পরিচয় আছে। MH13। আন্ডারওয়ার্ল্ড এ ওরা এই নামেই পরিচিত। টাকার বিনিময়ে যে কাউকে খুন করে। কঠোর নিয়ম মেনে চলে। কাউকে কোন প্রশ্ন করে না। ওদেরও কেউ কোন প্রশ্ন করতে পারবে না। আন্ডারওয়ার্ল্ড এ কেউ ওদের চিনে না। ওরা ছেলে না মেয়ে এইটাও জানে না।শুধু জানে MH13। কাউকে খুন করতে মোটা অঙ্কের টাকা ওদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয় আর যাকে খুন করতে হবে তার ছবি ও বৃত্তান্ত ইমেইল করে। তারপর শেষ। কেউ জানতেও পারে না কে মেরেছে। ...

গোয়েন্দার খোঁজে!!!

Image
ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির বিদায় হয়ে গেছে বহু আগেই। রাস্তার পাশে, মাঝে বহু খানা খন্দে রচনা হয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ শিশু জলাশয়ের। সেই শিশু জলাশয়ে দেখা যায় নিজের প্রতিবিম্ব। দেখা যায় নীলচে আকাশের ঘোলাটে চেহারা। আবারও থমথমে তার মুখ। যেনো প্রেমিক প্রত্যাখ্যাত কোনো নারীর ছিঁচকাঁদুনে গাল ডেকে বলছে একটু ভালোবাসা চাই। দেবে? নীরার কথা ভাবছে জাহেদ। ভারতের সেই ট্যুরে আকস্মিক বিয়ে তারপর দেশে ফিরে রাজীবের ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়া যেনো সিনেমার কোনো গল্প। ঠক ঠক। চিন্তায় ছেদ পড়লো। এখন টেবিলের ও প্রান্তে এজেন্ট শরীফ। নতুন একজন ডিটেকটিভকে টিমে রিক্রুট করার কথা চিন্তা করছে ডিজিএফআই। মেজর তালহা শয়েক প্রোফাইল দিয়েছেন। কিন্তু একটাও মনপুতঃ হচ্ছে না। -ভাল্লাগছে না চলো বেড়িয়ে আসি। -চলেন শরীফ ভাই। কে যেনো মেঘগুলোর শীতলতা নিংড়ে দিয়েছে বাইরে। হিম হিম ঠান্ডা ভাব। চারিদিকে নেমে আসছে কালো অন্ধকার। পার্কিং লটে মাইক্রোবাস ভ্যানটা আছে। রিশাদকে কল করে আনা হলো। এরপর তারা রওনা হলো। -যাবেন কোথায়? -যে কোনো একটা খাবারের দোকানের সামনে। -ওকে। রিশাদ এফ এম ছেড়ে দিলো। গান শুনতে শুনতে তন্ময় হয়ে গেলো দুজনে। জাহেদ ভ্যানের ভেতরে। প্র...

গোয়েন্দা গল্প-আঁকিবুকিৱ

Image
সাব ইন্সপেক্টরের শরীরখানা দশাসই। লম্বা-চওড়া। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। চোখ দেখেই বোঝা যায় ঘুুম ঠিকমতো হয়নি। ডেস্কের সামনে ঝুঁকে দাড়িয়ে প্রথমে ভূমিকা করে নিল। ‘ডিআইজি সাহেব আপনার কাছেই পাঠালেন। বললেন, আগেও আপনি আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন। আরেকবার যদি…।’  ‘জজ সাহেবের কেস।’ ‘জ্বী। পত্রিকায় দেখেছেন নিশ্চয়ই।’ বলতে বলতে বিশাল বপুটা নিয়ে আরাম কেদারায় বসে পড়লো পটল সরকার। ‘বিশাল গাড্ডায় পড়েছি বুঝলেন। কূল নাই কিনার নাই। আছে কেবল এই চিরকুট।’ বলে একটুকরো কাগজ ঠেলে দিলো বৈভবের দিকে। ‘দেখুন কিছু করতে পারেন কি না।’  ঠিক চিরকুট নয়, এ ফোর সাইজের চেয়ে লম্বায় কিছুটা কম হবে কাগজটা। কোন প্যাড থেকে টেনে ছেড়া হয়েছে। এক কোণে বলপয়েন্টের কিছু আঁকিবুকি, লেখা শুরুর আগে কাগজের কোনে যেমনটা করা হয়। কালি ঠিকমতো বের হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করা আর কি।  ‘এই নোটটুকুই পেয়েছি আমরা। আজ দুপুরেই মেইলে এসেছে।’ মুখ খুললেন পটলবাবু। ‘দুপুরে কখন? ‘১২টার দিকে। তাও একটা খবর মিলল। সেদিন সকালে কোর্টরুম থেকে গুন্ডাগুলো জজসাহেবকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তো কোনো খবরই পাচ্ছিলাম না। এদিকে প্রেসের যন্ত্রণায় অস্থির…’ ...

ক্রাইমস্টোরিঃ নেক্রোফিলিয়াক পর্ব-২

Image
৪. ‘কলেজে চলে আসতে পারতি ।’ একটু হেসে মাথা নাড়ে আরাফাত । কিছু না বলে প্রথমে আরেকটা সিগারেট ধরায় সাকিব যত্ন করে । তারপর মুখ তোলে । ‘ওখানে এসব নিয়ে আলোচনা করা যাবে না । বিষয়টা স্পর্শকাতর ।’ পার্কের আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে হাসে এবার আরাফাত, ‘ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টদের নিয়ে হয়েছে এই সমস্যা তোদের । শালারা এটুকু বুঝিস না – আমাদের জন্য স্পর্শকাতর বলে কিছুই নেই । আমরাই স্পর্শ করি । যখন কেউ হয় কাতর । বুঝলি ?’ বাঁকা চোখে তাকায় সাকিব বন্ধুর দিকে । ছেলেটা মনে হচ্ছে আরেক বোতল ভদকা মেরেছে । শালার বাপের টাকা আছে বটে । মাত্র গত পরশু দেখেছে নিজের গার্লফ্রেন্ডকে তার বন্ধুর সাথে পাগলের মত চুমু খেতে । বোকা মেয়েটা গাড়ির কাচ তুলে দিতে ভুলে গেছিল । আরাফাত দেখে চলে এসেছে । কিছু বলেনি । যত কথা তার হয়েছে গত রাতে – একটা ভদকার বোতলের সাথে । সঙ্গ দিয়েছিল সাকিব । ভদকার বোতলকে মাঝরাতে যখন জীবনের কাহিনী শোনাচ্ছিল আরাফাত – কান পেতে শুনেছিল সাকিব । বেচারা আরাফাতের চৌদ্দ বছরের পুরাতন প্রেম যখন ব্যর্থতাতে ডুবে গেছে – সেখানে সাকিবের মোটেও দুঃখ পাচ্ছিল না । অদ্ভুত রকমের একটা কৌতুক অনুভব করছিল ও সব...