কালো চোখ


সময়টা জুলাইয়ের শেষের দিকে। প্রচন্ড গরম পড়ছে, বিদ্যুৎ এক ঘন্টা থাকে তো দু'ঘন্টা থাকে না। মাঝে মাঝে বাতাস বন্ধ থাকায় থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। রাত প্রায় দু'টো বেজে গেছে। ঘুম ও আসছে না গরমে। বাহিরে ভরা পুর্ণিমার আলো। আজ বৃহস্পতিবার, আর এই দিনটা অনেকটা ঈদের মত মেডিকেল ছাত্র-ছাত্রিদের কাছে। অনেক দুরে দাঁড়িয়ে থাকা দৈত্যের মত হাসপাতালের ওয়ার্ড গুলোতে দু'একটা বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছে। অবশ্য হাসপাতালে দু'টো বিদ্যুতের লাইন দেওয়া আছে। একটায় বিদ্যুৎ না থাকলে ও অন্যটায় থাকে। চারপাশের নীরবতার মাঝেও একটানা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, আর তার সাথে হোস্টেলের পাশের রেইনট্রি গাছগুলোতে মাঝে মাঝে পাখির কিচিরমিচির শব্দ তো আছেই। নারিকেলের পাতাগুলো ঝিম মেরে একে অপরের গায়ে ঘুমিয়ে পড়েছে বোধহয়, বাতাস আসলে আবার মরমর ধ্বনির ছন্দে ছন্দে জেগে উঠবে। মাঝে মাঝে অনেক দুর থেকে দু'একটা কুকুরের ডাক, হাইওয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়া রাতের বাস গুলোর শোঁ শোঁ শব্দ পরিবেশটাকে আরো চমৎকার করে তুলেছে। আর মাঝে মাঝে এম্বুলেন্সের আওয়াজ, নাইট গার্ডের বাঁশির শব্দ তো আছেই।
আমি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র। এতক্ষণ ধরে হোস্টেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে এই থমথমে নিস্তব্ধ পরিবেশ উপভোগ করছি। প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা আমার একটা নেশা। হঠাৎ মনে হল যদি পুকুর পাড়ে বসে জোছনা আর পানির খেলা দেখতে পারতাম, আর সেই সাথে শরীর শীতল করা ঠান্ডা বাতাস ; তাহলে মন্দ হত না। আমাদেরে মেডিকেল কলেজে খুব সুন্দর শান বাঁধানো পুকুর আছে। আর এখন ভরা পুর্ণিমা, সুযোগটা মিস করতে চাইলাম না। আমার রুমমেট দুজনকে বললাম যেতে, কেউ রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত একাই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ও সব ভুতের ভয় টয় আমার নেই। একে তো মেডিকেল ছাত্র তার সাথে যৌবনের তাজা গরম রক্ত, ভুতটুত কেয়ার করি না। মোবাইলটা নিয়ে রুম থেকে বের হলাম। ছেলেদের হোস্টেল থেকে বের হয়ে খানিকটা পূর্ব দিকে হেটে গেলে মেয়েদের হোস্টেল। দুই হোস্টেলের মাঝখান দিয়ে দক্ষিন দিকে রাস্তা গেছে। সেই রাস্তা ধরে মিনিট খানেক সামনে গেলেই পুকুর। পুকুরের পশ্চিম পাড়ই হল মেডিকেল কলেজের শেষ সীমানা। অনেক পুরাতন একটা প্রাচীর দেওয়া আছে। শেওলা জমে জমে কয়েক স্তর পুরু হয়ে গেছে, কোথাও কোথাও ভেঙেও পড়েছে। প্রাচীরের পরেই হচ্ছে সেচ ও মৎস গবেষণা কেন্দ্র। প্রাচীর থেকে শুরু করে অনেকদুর পর্যন্ত পশ্চিম দিকে ঘন জঙলে ভরা। জঙল শেষে খানিকটা দুরে আবাসিক ভবন রয়েছে কয়েকটা। তবে জঙলের মধ্যে একটা পরিত্যক্ত ভাঙা বিল্ডিং আছে। দিনের বেলাতে ও সেখানে কেউ যায় না।
পুকুরের পশ্চিমপাশের প্রাচীর ঘেষে সরু রাস্তা আছে। সেটা দিয়ে দক্ষিন পাড়ে আসলেই এক সারিতে স্যারদের আবাসিক ভবন। এ ভবন গুলোতে কেউই থাকে না, এখনো নির্মাণ কাজ চলছে। আর উত্তর পাড়ে মেয়েদের হোস্টেল। আমি পশ্চিমপাড় দিয়ে হেটে এসে দক্ষিন পাশে স্যারদের আবাসিক ভবনের সামনের দিকে যে শান বাঁধানো ঘাট আছে সে ঘাটে এসে বসলাম। একেবারে জনমানব শূন্য। এই নীরবতাই রাতের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। পুকুরের পানি কানায় কানায় পূর্ণ। মোবাইল বের করে হাতে নিলাম, রাত ২.৩২ বেজে গেছে। হালকা ঝিরঝির বাতাস এসে শরীর আর মন দুটোকে চাঙা করে দিচ্ছে। পুকুরের দিকে তাকিয়ে কেমন জানি একটু শিহরণ অনুভব করলাম। বাতাসে পুকুরের পানিতে হালকা ঢেউ সৃষ্টি হচ্ছে আর জোছনার আলো সেই ঢেউগুলোতে চিকচিক করে খেলায় মেতে উঠেছে।
পশ্চিম পাশের জঙলের বিশাল বিশাল গাছের ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এসে বুনো ঘাসের উপরে পড়ছে। মিনিট দশেক হল পুকুর পাড়ে বসেছি কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে অচেনা অজানা কোন এক মায়াপুরীতে হাজার হাজার বছর ধরে বসে আছি। মেডিকেলের এত প্রেসারের মধ্যে থেকে এ রকম সৌন্দর্যই বা কতজন উপভোগ করতে পারে। এবার পা দু'টো পানিতে ডুবিয়ে বসলাম। আমি পা ডুবানোর সাথে সাথে মনে হল পুকুরের পশ্চিমপাড়ে পানিতে কিছু একটা নড়ে উঠেছে। চাঁদের আলোতে স্পষ্ট দেখলাম সেদিকের ঢেউগুলো খানিকটা বড় হয়ে আস্তে আস্তে আবার আগের মত মিলিয়ে গেল। দুর! ব্যাঙ ট্যাঙ হয়ত লাফিয়ে পড়ছে। এবার স্পষ্টভাবে জঙলের মধ্যে দুই তিনজন মানুষের হাটার আওয়াজ শুনতে পেলাম।সে দিকে তাকাতেই দেখলাম কেউ নেই। এত রাতে তো এখানে কেউ আসার কথা না, সবাই তো ঘুমাচ্ছে। নাহ! আমি হ্যালুচিনেশন শুনছি। নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেখলাম যে এটা হ্যালুচিনেশন নয়, আমি বাস্তবেই শুনেছি। এবার শরীরটা কেন জানি ভার ভার হয়ে গেল। হঠাৎ করে কয়েকমাস আগের একটা কথা মনে পড়ে গেল। পুকুর পাড়ে আসার আগে তো সেটা আমার খেয়ালই ছিল না, আর থাকলে ও আমি সেটা বিশ্বাস করি না। তবে এখন আমার সাথে যা ঘটছে সেটা তো বাস্তব, তাহলে সেই কাহিনীটি কি সত্যি ছিল? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম।
আমাদের ক্যাম্পাস তখন সবে মাত্র নতুন শিফট হয়েছে। হাসপাতালের গেটে বসে চা খাচ্ছিলাম। স্থানীয় মুরব্বী গোছের একজন লোক ও সেখানে বসে চা খাচ্ছিলেন। আমার দিকে বার কয়েক তাকিয়ে সামান্য কাঁশি দিয়ে গলাটা পরিষ্কার করে বললেন,
- তা ভাতিজা, তুমি তো মনে হয় মেডিকেল পড়।
- জ্বি চাচা।
- বাড়ী কই তোমার?
- কুমিল্লা
- শুন, তোমাদের মেডিকেল হওয়াতে এই এলাকাটা অনেক ভাল লাগে এখন। আগে তো জঙল ছিল এই এলাকা। আমরা দিনের বেলাতে ও এদিকে আসতাম না।
- ভুতের ভয়ে চাচা?
- না, তা না। আমরা দিনের বেলাতে ও এখানে বাঘের ডাক শুনতাম। আর একটা ব্যাপার ছিল!
- কি ব্যাপার চাচা?
- আমাদের দাদা-দাদিরা আসতে দিত না।
- কেন?
- এই জঙলে নাকি কালো চোখ ওয়ালা সতের আঠারো বছরের এক মেয়ে হাটত।
- তাই নাকি, আপনি দেখেছেন চাচা? আমি একটু অবজ্ঞার সুরেই বললাম
- না, তবে দাদা-দাদিদের মুখে শুনেছি। সত্য কিনা জানি না।
যে কোন কাহিনী শুনতে আমার খারাপ লাগে না। তাই এবার একটু আগ্রহ নিয়েই বললাম,
- ঘটনাটা বলেন দেখি, শুনি
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে উনি বলতে লাগলেন
- তোমাদের মেডিকেলের একাডেমিক ভবন থেকে শুরু করে ছেলেদের হোস্টেল, মেয়েদের হোস্টেল, পিছনে পুকুর ; সব জায়গাই ঘন জঙল ছিল। দিনের বেলাতে ও সূর্যের আলো ঢুকত না। যে সময়ের কাহিনি এখন শুনবা, সেটা আজ থেকে প্রায় দু'শো বছর আগের। তখন এ এলাকায় খুব অত্যাচারি এক জমিদার ছিল। শুধু শুধু মানুষকে হত্যা করত। সামান্য পরিমান অপরাধ করলেই হত্যা করত। এখন তোমাদের মেয়েদের হোস্টেল আর পুকুর যেখানে, সে জায়াগাটা ছিল তার মানুষ হত্যার গোপন জায়গা। এখানে জমিদারের পাইক পেয়াদারা নিরীহ মানুষ ধরে এনে এনে হত্যা করত। একবার সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সতের আঠারো বছরের এক মেয়ে প্রতিবাদ করেছিল। পরিণামে তাকে ও মরতে হয়েছিল। শুনেছি জমিদার নিজ হাতে তাকে খুন করেছিল। ঐ জমিদারসহ যারা খুনে জড়িত ছিল তারা প্রত্যেকেই দুই মাসের মধ্যে মারা গিয়েছিল। মরার আগেরদিন পর্যন্ত ও তারা দেখেছিল যে কালো চোখে সেই মেয়ে তাদের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর হাত দিয়ে ইশারা করছে জঙলে যাওয়ার জন্য।
উনি আবার আবার গলা পরিষ্কার করে বললেন,
- তারপর থেকে সেই মেয়েকে জঙলে অনেকে দেখেছে, বড় বড় কালো চোখে তাকিয়ে থাকত কিন্তু কাউকে কিচ্ছু বলত না।
- কেউ কি নিজের চোখে দেখেছিল?
- আমার দাদা একবার দেখেছিলেন। গাছ কাটার জন্য এসেছিলেন সে জঙলে, সাথে দু'জন লোক ছিল। আমার দাদা প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে একটু দুরে ঝোপঝাড়ে গিয়ে বসছেন আর অমনি নাকি দেখেন যে সামনে কালো চোখওয়ালা সেই মেয়ে বসে ওনার দিকে তাকিয়ে আছে। দাদীর কাছ থেকে শুনেছি, দাদা নাকি তারপর এক মাস জ্বরে ভুগেছেন। আর কোনদিন সেই জঙলে যাননি।
- আচ্ছা চাচা, কিন্তু এই যুগের ছেলে আমরা। এটা কি বিশ্বাস করব?এখন বিজ্ঞানের যুগ। এসব চলে না চাচা। সবই মিথ্যা কাহিনী আর আপনার দাদা যেটা দেখেছেন সেটা হ্যালুচিনেশন ছিল।
- বিশ্বাস করা আর না করা তোমার ব্যাপার। আমি এমনি বললাম।
পুকুর পাড়ে বসে আমার সেই চাচার ঘটনাটা মনে পড়ে গেল। এইবার অল্প অল্প ভয় পেতে লাগলাম। এই বুঝি দেখব সেই মেয়েটি কালো চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর মিটমিট করে হাসছে। এবার কিন্তু সত্যি সত্যি আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে। বাতাসটা একটু জোরে বইতে লাগল। এক টুকরা মেঘ এসে চাঁদটাকে ঢেকে দিয়ে গেল। জোছনা ও কমে এসেছে। আর বসে থাকতে ইচ্ছা করছে না। আমি বিজ্ঞান মনস্ক একটা ছেলে, কোনদিন ভুত-প্রেতে বিশ্বাস করি না। তবে জ্বীনে বিশ্বাস করি। কিন্তু এই মূহুর্তে এখানে বসে থাকতে ইচ্ছা করছে না। পানি থেকে পা দু'টো তুলে দাঁড়িয়েছি মাত্র এমন সময় আবার ও পশ্চিম পাশে পানি নড়ার শব্দ পেলাম। এবার গিয়ে দেখব কি আছে সেখানে। কয়েক পা হেটে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। হঠাৎ মনে হল পা টিপে টিপে কেউ একজন আমার পিছে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি মাথা ঘুরিয়ে পিছনে দেখতে যাব আর এমন সময় মূহুর্তের মধ্যে পিছন থেকে সে আমার ঘাড় চেপে ধরল। খুব শক্ত হাতের মত লাগছে। নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। সব অনুভুতি গুলি তখন ফিকে হয়ে আসছে। এই বুঝি পিছনের থাকা সেই অজানা প্রাণীটি আমাকে মেরে ফেলবে। আমার চোখ এক দৃষ্টিতে পানির দিকে তাকিয়ে আছে, কোন বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা এবার কাজ করছে না। আমি কোন খারাপ জ্বীনের পাল্লায় পড়েছি। আজকেই শেষ রাত আমার জন্য। পুকুরের পানি আবার ও একটু নড়ে উঠল, তবে আগের থেকে কম। আমি ঘাড় নাড়াতে চাইলাম কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই পিছনে থাকা প্রাণীটি আমাকে পানিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। যেখানে পানি নড়ছিল, আমি একেবারে তার মাঝে গিয়ে পড়লাম। কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেলাম মনে হয়।
পা টা মনে হয় কিছুতে আটকে গেছে। পানির নিচে চোখ খুলে দেখি আমার পায়ের আঙুলে চুলসহ একটা মেয়ের মাথা আটকে আছে। আমি অনেক কষ্টে সেটা ছাড়ায়ে ডিগবাজি খেয়ে একটু দুরে সরে গেলাম। এবার আবার চোখ খুলে তাকালাম। সতের কি আঠার বছরের একটি মেয়ে হবে। চাঁদের উপর থেকে ততক্ষণে মেঘ সরে গেছে। চাঁদের আলো যখন আবার পানিতে পড়ল তখন স্পষ্ট দেখতে পেলাম কালো কালো দুটি চোখে সে মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখটা পুরো ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে সে পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। চুলগুলো মুখের চারপাশে সাঁপের মত আঁকাবাঁকা হয়ে পানির ঢেউয়ের সাথে তাল মিলাচ্ছে। আমি অবশেষে সেই মেয়ের দেখা পেলাম। তখন ও আমি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলিনি। তার গায়ের ওড়না আমার পায়ের কাছেই ছিল, সেটা ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে পানির উপরে ভেসে উঠলাম এবং জান প্রাণ দিয়ে সাঁতার কেটে পাড়ে উঠলাম। পুকুরপাড়ে কেউ আছে কি নেই সেদিকে তাকানোর সাহস নেই। এক দৌড়ে হোস্টেলে এসে পড়লাম। বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়েছি।তবে কাউকে কিচ্ছু বলিনি, সবাই হাসাহাসি করবে শুনলে।
সকালে রুমমেটের ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙল। চোখ খোলার সাথে সাথে সে বলল,
- আরে ব্যাটা, তুই এখনো ঘুমাস।
- ক্যান, আজতো শুক্রবার। ক্লাস নেই, সমস্যা কি?
- আরে, উঠ। দ্রুত আয়, আমাদের মেডিকেলের পুকুরে একটা মেয়ের লাশ পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ এসেছে ময়নাতদন্তের জন্য নিতে।
সেকেন্ডের মধ্যেই গত রাতের সব ঘটনা মনে পড়ল। দ্রুত পুকুর পাড়ের দিকে গেলাম। পুলিশ ততক্ষণে লাশটাকে তুলে পুকুর পাড়ে রেখেছে। আমি তাকিয়ে চিনতে পারলাম, এই মেয়েকেই আমি গতরাতে দেখেছিলাম। পুলিশের কাছে জানতে পারলাম কারা যেন খুন করে পুকুরে ফেলে গেছে। এবার আমি দৌড়ে পশ্চিম পাড়ে গেলাম। এই তো গতরাতে আমি এখানেই দাঁড়িয়েছিলাম। এবার আমার কিছু বুঝতে বাকি নেই। কে বা কারা মেয়েটাকে সেই পরিত্যক্ত বিল্ডিং এ খুন করে পুকুরে ফেলার সাথে সাথেই আমি উপস্থিত হই। মেয়েটাকে পানিতে ফেলার পর ও মনে হয় জীবিত ছিল, যার কারনে পানি নড়ার শব্দ পেয়েছিলাম। 
আমি থাকার কারনে সেই খুনীরা দেখতে পারছিল না আসলেই মেয়েটা মরেছে কিনা। শেষবার যখন পানি নড়ার শব্দ পাই তখন তাদের কেউ একজন এসে আমাকে ও মারার জন্য পানিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। মেয়েটার মাথায় আঘাত করেছিল পাষন্ডগুলো, যার কারনে তার চোখের চারপাশে কালো হয়ে রক্ত জমেছিল। এই রক্ত জমাকে মেডিকেলের ভাষায় 'ব্লাক আই' বা 'কালো চোখ' বলে। আর এই চোখ দেখেই আমি ভয় পেয়েছিলাম। মেয়ের লাশটাকে শেষবার দেখে হোস্টেলে ফিরে আসার সময় একটু বিবেকের কাছে বাধা লাগছিল, যদি আমি প্রথম পানি নড়ার শব্দ পাওয়ার সাথে সাথে মেয়েটাকে দেখে উঠায়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতাম তাহলে হয়ত বাঁচতে পারত। কিন্তু মিনিট খানেকের মধ্যে সে অপরাধবোধ আর রইল না। কারন, খুনিরা পাশেই পালিয়ে ছিল।তখন মেয়েটাকে উঠাতে দেখলে আমাকে সহই খুন করে ফেলত।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প: বুড়ো

নিখোঁজ

সিরিঞ্জ