ফাষ্ট ক্লাস হানিমুন
ডিভোর্সের বয়স সাত মাস দুই সপ্তাহ চার দিন পার হয়ে গেলেও শনিবার সকালে রোজমেরীবিহীন বেডরুমে, মনে বেশ আনন্দ নিয়ে ঘুম ভেঙে গেলো ডেভিড ডিকস্টারের। হাই তুলল সে হাত-পা আয়েশ করে ছড়িয়ে দিল। ডাবল বেডে গা মোড়ামুড়ি করতে করতে একাকী থাকার মজা উপভোগ করছিল ও।
ইনসমনিয়ায় ভোগা রোজমেরীর ক্যানকেনে কন্ঠের ঘ্যানঘ্যান, আর তার সুখের ঘুম নষ্ট করবে না। রাতের বেলা হার্টের প্যালপিটেশন বেড়ে যাওয়া বা শ্বাস কষ্ট হওয়ার ক্রমাগত আভিযোগ আর বিরক্ত করবেনা ডেভিডকে। ডেভিড আলস, তার ভেতর দয়ামায়া নেই। তার ভূড়ি বেড়ে যাচ্ছে, রাতের বেলায় বিশ্রী নাক ডাকে বলে ঘুমাতে পারেনা রোজমেরী। সে অমনোযোগী, রোজমেরীর অসুখ বিসুখের দিকে তার কোন খেয়াল নেই। ইত্যাদি হাজারও বিষয় নিয়ে আর কোন লেকচারও শুনতে হয়না ডেভিড ডিকস্টারকে। ডান পায়ের আঙুলের এক লাথিতে একদা রোজমেরীর শয্যা থেকে বালিশ ফেলে দিল ও। এখন সে কত সুখি, ভেবে মুচকি হাসি ফুটল ঠোঁটে। তবে প্রাতঃকৃত্য ও গোসল সেরে যখন নাস্তার টেবিলে বসল মনের উল্লাস দূর হয়ে গেলো। টোস্টে পুরু করে মাখন মাখতে গিয়ে মনে পড়েছে, আজ রোজমেরীকে তার খরপোশের টাকা দেয়ার দিন। টোস্টে আর কাঁমড় দেয়া হলো না, খিচড়ে গেল মেজাজ। খাবারটা টেবিলে রেখে বেডরুমে গেলো ডেবিড। সেগুন কাঠের দামি ওয়ারড্রোবের টপ ড্রয়ার খুলে চেক বইটি বের করল। রাগ এবং অনিচ্ছা নিয়ে পাঁচ অংকের সংখ্যা বসাতে হলো চেকের ওপর। তিন মাস আদালতে বিচ্ছেদ লড়াই শেষে রোজমেরীর একমাত্র বিজয় প্রতি মাসে ডেভিডের কাছ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা করে ভারণপোষনের খরচ পাবে। অনেক টাকা। গাত সাত মাসে প্রায় তিন লক্ষ টাকার খসেছে ডেভিডের। শেয়ার বাজারের ব্যবসা করে এক সময় ভালোই কামিয়ে ও। ব্যাংক ব্যালেন্স মন্দ নয়। তবে ইদানিং শেয়ার বাজারের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। তবুও প্রতি মাসে ওই বিরক্তিকর মহিলার পিছনে এতগুলো টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে ভাবতেই বিদ্রোহী হয়ে ওঠে ডেবিডের মন। কিন্তু করার কিছু নেই আদালতের আদেশতো আর অমান্য করতে পারবে না। চেকটি কুরিয়ারে পাঠিয়ে দিতে হবে রোজমেরী রোজারিওর বাসার ঠিকানায়। সে এখন তার বড় বোনের সঙ্গে মোহাম্মাদপুরে থাকে। ডেভিট শুনেছে বহাল তবিয়তেই আছ তার ভূতপূর্ব স্ত্রী। থাকবে না!! মাসে-মাসে মাগনা চল্লিশ হাজার টাকা পেলেতো স্বর্গে থাকার কথা। রাগে গা-টা আবার চিড়বিড় বরে ওঠে ডিভিডের। সে চেকটি খামে ভরেছে, বেজে ওঠল কলিংবেল। কপালে ভাঁজ পড়লো ডেভিডের, বিস্মত। ঘড়ি দেখল। সাড়ে ন'টা বাজে। এ সময়তো সাধারণত কেউ আসে না। কাজের ছুটা বুয়া সকালে নাস্তা বানিয়ে, দুপুরের রান্না করে চলে গেছে। সে আবার আসবে বিকেলে। রতের রান্না করতে। তবে কে এল!! নিশ্চই ফেরিওয়ালা টাইপের কেউ এসেছে। এক লোক মাঝেমাঝে ছুটির দিনে এসব বিক্রি করতে আসে। একদিন প্রচন্ড ধমকও দিয়েছে ডেভিড এসব তার লাগবে না বলে। ফেরিওয়ালা মিনমিন করে বলেছে বেগম সাহেবা নাকি তার কাছ থেকে প্লাস্টিকের ঝুঁড়ি, বালতি এসব কিনতেন। বেগম সাহেবা এখন আর এখানে থাকেন না। তারপরও দু'দিন ওকে বিরক্ত করেছে।
আজ হারামজাদাকে ঠিক চড় কষিয়ে দেবে ডেভিড। রেগেমেগে ঝড়াং করে দরজা খুললো। না, ফেরিওয়ালা নয় দোরগোড়ায় দাড়িয়ে আছে গর্ডন ফারন্দেজ গোমেজ। সুপ্রভাত, দাঁত বের করে বললো গর্ডন। গর্ডন গোমেজ ডেভিডের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো। রুমমেট ছিল শহিদুল্লাহ হলে। ধান্দবাজ টাইপের মানুষ। ছোটখাটো নানান ব্যবসা করেছে। কিন্তু ধান্দাবাজির কারণে কোন ব্যবসাই টিকিয়ে রাখতে পারেনি। রোজমেরীর সঙ্গে কয়েকদিন আগে ওকে এক রিকশায় ঘুরতে দেখেছে ডেভিড। গর্ডন হয়তো তার সুদর্শন চেহারা দিয়ে রোজমেরীকে গেঁথে ফেলেছে। ওর গায়ের কালো রঙের নতুন সু্টটা হয়তো রোজমেরীরই উপহার। ডেভিডের খোরপোষের টাকা দিয়ে কেনা? পাঁয়ের জোতা জোড়াও চকচকে। দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে সে দুলছে। টানটান মুখের চামড়া, চেহারায় কিছু পাবার প্রত্যাশা। "তুমি এখানে কি করছো?" ডেভিডের গলার স্বর একটু বেশিই কর্কশ শোনালো। তোমার জন্য একটু বেশিই সকাল হয়ে গেলো না? হয়তো বা, অচঞ্চল গর্ডন। ভিতরে আসতে পারি? নাক দিয়ে বিরক্তি সরূপ শব্দ করে দরজা থেকে সরে দাড়ালো ডেভিড। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে ড্রইংরুমে ঢুকলো গর্ডন। বসল সোফায়। ভার্সিটিতে একই বিষয়ে পড়াশোনা করলেও ওরা কখনো বন্ধু হতে পারেনি। আসলে গর্ডনের চালিয়াতি ভাবটাই সহ্য করতে পারত না ডেভিড। একরুমে থাকলেও কথাবার্তা হতো খুব কম। ওকে এড়িয়েই চলতো ডেভিড। সেকেন্ড ইয়ারে ওঠার পরে অন্য রুমে গর্ডনের সিট অ্যালট হলে হাপ ছেড়েই বেঁচেছিল ও। গর্ডনের সঙ্গে ইদানিং দু-একবার দেখা সাক্ষাত হওয়ার কারণ ওই রোজমেরীই। ধুমসী রোজমেরীর সঙ্গে গর্ডন ডেটিং করছে এ কথাটা হজম করতে কষ্ট হয় ডেভিড ডিকস্টারের।
"রোজমেরীর সঙ্গে শীঘ্রি দেখা হয়েছে?"
গোমেজের বিপরীত দিকের উইং চেয়ারটি দখল করল ডেভিডের গলায় উপহাস।
"সে তো সব সময়ই দেখা হয়, হাসলো গর্ডন। আসলে আজকে ওর ব্যাপারেই তোমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।
রোজের ব্যাপারে বহু কথা শুনেছি, টেবিলে রাখা ডানহিলের প্যাকেট থেকে একটি সিগারেট নিল ডেভিড। সরু চোখে অপর জনকে লক্ষ করছে ডেভিড। "দুজনে মিলে ভালোইতো জুটি করেছো।
হেসে উঠল গোমেজ "তোমার হিংসে হচ্ছে।?"
না, অবাক হচ্ছি। "হয় রোজমেরী একদম বদলে গেছে নতুবা তোমার মত নির্বোধ, বধির এবং কনা মানুষ আমি জীবনে দেখিনি। ওযে কি জিনিস তা বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছো।? "
"বিষয়টি পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল, বললো গর্ডন। তবে মাঝেমাঝে ও খুব আদুরে হয়ে ওঠে। এবং দিলখোলা।"
মনে মনে ভুতপূর্ব স্ত্রীকে একটি গালি দিলো ডেভিড। হাতের সিগারেটটা না ধরিয়েই অ্যাশট্রেতে ফেলে দিলো।
"তোমার মতলবটা কি, গোমেজ? কেন এসেছ এখানে?"
বললামতো রোজমেরীর বিষয়ে কথা বলতে। জানি ও পৃথিবীর সবচেয়ে কাঙ্খিত নারী নয়। ওর শরীরে থলথল করে চর্বি। সব সময়ই কোনও না কোনও অসুখে ভুগছে এবং কথা বলে বলে তোমার কানের পোকা নড়িয়ে দেবে।
"তো?"
তবে সেদিন একটা কথা ভাবছিলাম। ওকে তো তোমার প্রতি মাসেই খোরপোস বাবদ মোটা অংকের টাকা দিতে হচ্ছে।
টাকার পরিমাণটা কত, ডেভিড?
"তা দিয়ে তোমার দরকার কি?"
অনুমান করি ত্রিশ - চল্লিশ হাজার টাকার কম নয়, নাকি?
"দেখো গর্ডন-"
তুমি আমার কথা আসলে বুঝতে পারছো না, খ্যাক খ্যাক করে হাসলো গর্ডন। আমি তোমার ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলাতে আসিনি। এসেছি তোমাকে সাহায্য করতে।
প্রতি মাসে তোমার কষ্টার্জিত অর্থ রোজমেরীর পিছনে যাতে ব্যয় করতে না হয় সে বিপদ থেকে বাঁচাতে একটা বুদ্ধি করেছি আমি। কাজেই আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলে তোমার লাভ বই ক্ষতি হবেনা। দোস্ত।
"তুমি আমার খরচ বাঁচাতে চাইছো?"
তাই তো বললাম প্রতি মাসে তোমার ত্রিশ-চল্লিশ হাজার টাকা বেঁচে যাবে। কী, আগ্রহ হয়?
যথেষ্ট আগ্রহবোধ করছে ডেভিড ডিকস্ট। তবে চেহারা ভাবলেশহীন করে রাখলো।
"ঠিক আছে। বলো শুনি তোমার বুদ্ধিটা কী? "
কি আবার, বিয়ে। রোজমেরী আবার বিয়ে না করলে তো তোমাকে খোরপোশ দিয়ে যেতেই হবে। আইন তো তাই বলছে।
"রোজমেরীর বিয়ে!! পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নির্বোধ ছাড়া আর কেউ ওকে বিয়ে করবে না। আমি চিনিতো ওকে। হাঁড়ে হাঁড়ে চিনি। পাঁচটি বছর এক সঙ্গে ছিলাম। গড, আমার হাঁড় মাংস চিবিয়ে খেয়েছে। শিউরে উঠল যেন ডেভিড। তারপর নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ করে জানতে চাইলো, বোলো না যে তুমি ওকে বিয়ে করারর চিন্তা-ভাবনা করছো। "
স্বাভাবিক অবস্থায় কস্মিনকালেও এ চিন্তা করতাম না। কিন্তু ইদানিং খুব টানাটানি যাচ্ছে। দেনার সাগরে ডুবে আছি।
"তুমি কি ভাবছ রোজমেরী তোমাকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য কনবে? আরে ওতো আমার টাকায় চলে। "
না, আমি রোজমেরীর কাছে টাকা চাইতে যাবও না। আমার আসলে এখুনি বেশকিছু টাকার দরকার। পাওনাদারের ভয়ে বাসায় ঘুমাতেও পারিনা এমন অবস্থা। ওরা এখন ফোনে হুমকি ও দিচ্ছে। তাই বেশির ভাগ সময়ই মোবাইলটা বন্ধ রাখি।
গর্ডন ঘাড় ফিরিয়ে পিছন দিকটায় চোখ বুলালো, পাওনাদাররা এ ঘরেও এসেও হাজির হয়েছে কি না দেখার জন্যই বোধহয়।
"তুমি কি আমার কাছে কোন পরামর্শ চাইতে এসেছ, গর্ডন? "
না, আসলে তোমাকে একটা প্রস্তাব দিতে এসেছি। মৃদু হাসলো গর্ডন। বিয়ের প্রস্তাব। আমি রোজমেরীককে বিয়ে করবো যদি তুমি আমাকে টাকা দাও। ক্যাশ। এবং এখন।
"শিস দিলো ডেভিড। খোকা, আসলে তোমার মাথাটাই খারাপ হয়ে গেছে ।"
আমার কোন উপায় নেই, বললো গর্ডন। তার মুখের দু'কোনা কুঁচকে গেছে। আজ রাতের মধ্যে আমি যদি তিন লাখ টাকা জোগাড় করতে না পারি ওরা আমার লাশ ফেলে দেবে বলেছে। ডেভিডের চোখে চোখ রাখলো সে। ডেবিড, আই মিন ইট। আমি রোজমেরীককে বিয়ে করতে রাজি আছি যদি তুমি আমাকে সাহায্য করো। আমি ওকে প্রস্তাব দিবো।
"তুমি কি করে জানো ও রাজি হবে।?"
রাজি হবে ও নিয়ে তোমাকে একটুও ভাবতে হবেনা, কিন্তু আমাকে নগদ তিন লাখ টাকা পেতেই হবে। এবং দ্রুত। আমার কাছে "নগদ তিন লাখ টাকা নেই, তবে বেয়ারার চেক দিলে, আজকেই ক্যাশ করতে পারবে। " নরম গলায় বলল ডেবিড। প্যাকেট থেকে আর একটি সিগারেট নিলো, এবার তা ধরালো। "কিন্তু আমি সিউর হবো কি কর? কি করে বুঝব তুমি পিছিয়ে যাবে না।?
প্রয়োজনে আমি তোমাকে লিখিত দিবো, উৎকন্ঠিত কন্ঠ, গর্ডনের। আমি ওর কাছে গিয়ে এখনি প্রস্তাব দেব। তুমি চইলে ওকে এখুনি ফোন করতে পারো।
"ঠিক হ্যায়, বললো ডেভিড।" বেড়ে গেছে হৃদৎস্পন্দন।
"ওকে ফোন করো গোমেজ।"
ঘেমে যাওয়া হাত প্যান্টে মুছে নিল গর্ডন।
হাত বাড়ালো ডেভিডের দিকে। মোবাইলটা দাও। আমার ফোন খোলা যাবেনা। জানোইতো পাওনাদাররা .....।
ডানে বামে মাথা নাড়ালো ডেভিড ডিকস্ট।
"আমার ফোন দিয়ে কল করে কোন লাভ হবেনা। রোজমেরী আমার নাম্বার ব্লক করে রেখেছে। তুমি বরং টি এন্ড টি তে চেষ্টা করো। এই নাম্বারটা আমি নতুন নিয়েছি।"
ড্রইংরুমের কোনায় অটবি থেকে কেনা ফোন স্যাস্টান্ডের দিকে ইঙ্গিত করল ও।
সোফা ছাড়ল গর্ডন। দৃড় পায়ে এগিয়ে গেলো ল্যান্ড ফোনের দিকে সোনালী রঙের রিসিভার তুলে রোজমেরী রোজারিওর কাছে ফোন করলো। ওকে লক্ষ করছে ডেভিড। রিসিভার কানে ঠেকিয়ে হডতো রিংটোন শুনছে। একটু পরে তার মুখে হাসি দেখা গেলো। "রোজমেরী" বললো গর্ডন। ভালো আছি। সুইট হার্ট, তুমি কেমন আছো।? উচ্চকিত গলায় এবার সে হেসে উঠলো। আমার মোবাইলে চার্জ নেই তাই টি এন্ড থেকে ফোন দিলাম। .... হ্যা...হ্যা ওখানে আবার যাব আমরা। হয়তো আজ রাতেই। শোনো রোজ..' গর্ডন ফোনের কর্ড আঙুলে পেচাচ্ছে। নার্ভাস লাগছে তাকে। তোমাকে একটা কথা বলতাম। কাল রাতেই বলতাম,
কিন্তু চারপাশে এত লোকজন ছিল যে... ভাবছিলাম আজ রাতেই কথাটা বলবো তেমায়। কাল সারারাত ঘুমাতে পারিনি জানো, জানু? কথাটা বলার জন্য কিছুতেই তর সইছিল না, ডার্লিং। তাই আজ সকালেই ফোন দিলাম। জবাব না পেলে আমি স্রেফ পাগল হয়ে যাব।চোখ বুজলো গর্ডন, তার কপালে ফুটে উঠেছে ঘাম। রোদ পড়ে চিকচিক করছে। গাঢ় গলায়, ফিসফিস করলো সে, আজকেই আমরা বিয়ে করবো।
সে ডেভিডের দিকে তাকালো। উদ্ভাসিত চেহারা। সত্যি বলছো? আনন্দিত শোনাল তার স্বর। সত্যি তুমি রাজি আছো, রোজ? ... শোন, তোমাকে আমি দু'ঘন্টা সময় দিলাম। আমরা মনিপুর চার্চে বিয়েটা সরে ফেলবো... ওখানকার ফাদার আমার বিশেষ পরিচিত। তিনি সব ব্যবস্থা করে দিবেন, কোন সমস্যা হবেনা। ....তোমাকে যে কত কথা বলার আছে! তাহলে ঐ কথাই রইল। তুমি কিন্তু বেলা একটার মধ্যে মনিপুর চলে আসছো। ...বেয়েটা সেরে আমরা আজ হোটেল
র্যা-ডিসনে লাঞ্চ করবো। ওকে সুইটি। গড ব্লেস ইউ। ঝকঝকে ক্রেডলে রিসিভার রেখে দিল গর্ডন। ঝাড়া পাঁচ সেকেন্ড বুক ভরা নিশ্বাস নিলো। তারপর সোফায় এসে বসে পড়লো ধপ করে। ডেভিড ডিকস্টারর তার দিকে স্থির ভাবে তাকিয়ে আছে।
"তুমি দেখছি, মিথ্যা বলোনি। বললো ডেভিড। তুমি সত্যিই বিয়ে করবে ওই..."
মিথ্যা কেন বলতে যাবো। থমথমে চেহারা গর্ডনের।
টাকাটা দাও, তোমাকে লেখিত দিয়ে দিচ্ছি যে রোজমেরী রোজারিওকে আমি বিয়ে করছি। পারলে একটু বাড়িয়ে দিও, ডেভিড। ধার শোধ করতেই তো পুরো টাকাটা চলে যাবে। বিয়ের একটা খরচা পাতি আছেনা....।
"ঠিক আছে হাসলো ডেভিড। আমি তোমাকে আরো পঁচিশ হাজার টাকা দেব। ক্যাশ। আমার তরফ থেকে তোমাদের বিয়ের গিফট। কক্স বাজার বা অন্য কোথাও থেকে একটা ফাষ্ট ক্লাস হানিমুন করে এসো। " দীর্ঘ শরীর নিয়ে সিধে হলো ও। হেঁটে গেলো গর্ডনের কাছে। ওর প্রশস্থ কাধে চাপড় মারলো। "একটু বসো, বন্ধু।
আমি চেক আর টাকা নিয়ে আসছি।"
" ঘড়ি দেখলো। আমার ব্যাংকটা কাছেই। "আজ বারোটা পর্যন্ত খোলা আছে। কাজেই চেক ভাঙাতে কোন সমস্যা হবে না। " মুখে স্বস্তির চওড়া হাসি নিয়ে লম্বা পদক্ষেপে নিজের বেডরুমে রওনা হলো ডেভিড ডিকস্টা।
সন্ধ্যার দিকে মোবাইলের শব্দে জেগে গেলো। ডেভিড হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে কান পাতলো ওপাশ থেকে ভেসে এল নাকিসুর গলা।
"মি. ডিকস্ট? আমি মঈনুদ্দিন লস্কর। আপনার সাবেক স্ত্রীর উকিল।"
"কে! ও লস্কর সাহেব, ঠোঁট কাঁমড়ালো ডেভিড। "
রোজমেরীর মতো এ লোকটাকেও দু'চক্ষে দেখতে পারেনা তারপর মনে পড়লো, রোজমেরী নামের বোঝাটা কাধ থেকে নেমে গেছে। "কী ব্যাপার?"
আমার হঠাৎ করে মনে হলো আপনি বোধকরি খবরটা পাননি তাই ভাবলাম ফোন করি। নাকি খবর পেয়ে গেছেন?
"কীসের খবর?"
দুঃসংবাদই বলতে পারেন, গম্ভির শোনালো লস্কর উকিলের গলা। বেশ বড় দুঃসংবাদ। বলতে আমার কষ্টই হচ্ছে, তবে কিছু আইনগত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, আপনার সাবেক স্ত্রীরর মৃত্যুতে...
"ওর কী হয়েছে?"
আমি অত্যন্ত দুঃখিত, মিসেস রোজমেরী রোজারিও গতরাতে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা গেছেন। মৃত্যুর সময় মি. গার্ডার গোমেজ তার পাশে ছিলেন। ভাবলাম আপনি এবং মি. গোমেজ যেহেতু পুরানো বন্ধু তাই...'
"পুরানো বন্ধুর নিকুচি করি" খেকিয়ে উঠলো ডেভিড। কেঁটে দিল লাইন তার পরপরই গর্ডনের নাম্বার ডায়াল করলো।
একটি মেয়ে একঘেয়ে কন্ঠে বারবার দুঃখ প্রকাশ করতে লাগল, এই মূহুর্তে কানেকশন দিতে পারছে না মোবাইল বন্ধ বলে। রাগের চোটে মোবাইলটা ছুড়ে ফেলে দিল ডেবিড। তড়াক করে নামলো বিছানা থেকে। চেস্ট অভ ড্রয়ার খুলে একটি নোটবুক বের করলো। এতে গার্ডনের বাসার ল্যান্ডফোনন নাম্বার আছে। নাম্বারটা খুজে পেতেই ডেভিড টি এন্ড টি দিয়ে গার্ডনের বাসায় ফোন করলো। সাড়া দিলো একটি তরুন কন্ঠ।
---হ্যালো?
"গার্ডন গোমেজ আছে?"
---আপনে কে বলতেছেন?
"আমার নাম ডেভিড ডিকস্ট। গার্ডনের বন্ধু। ও আছে কি না বলেন?
---মামাতো বাসায় নাইক্কা।
"কোথায় গেছে রুদ্ধশ্বাসে জানতে চাইলো ডেভিড।"
---বেলা তিনটার সময় এয়ারপোর্টে গেছে।
"ও কি কিছু বলে গেছে? চেঁচিয়ে উঠলো ডেভিড। নিশ্চই কিছু বলে গেছে।"
---জে, ভীত শোনালো তরুন কন্ঠ। কইলো কোন দূর দেশে নাকি হানিমুন করতে যাইবে। মাগার মামুতো শাদিই করে নাই হানিমুনেরর কতা কেন কইলো বুঝবার পারতাছি না।
Comments
Post a Comment